রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

অর্থ সঞ্চয়ে উৎসাহ ও সতর্কতা

ইকরামুল ইসলাম:
পবিত্র কোরআনে সুরা জুমারের ১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’

আয়াতে ‘অনুগ্রহ’বলতে অর্থ-সম্পদ ও প্রয়োজন পূরণের উপকরণকে বোঝানো হয়েছে। বস্তুত অর্থের সঙ্গে মানবজীবনের সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দৈনন্দিন খাদ্য-বস্ত্র ও ওষুধ-পথ্যের জোগান এবং বাসস্থান ব্যবস্থাপনাসহ নানা প্রয়োজনে অর্থ উপার্জন ও জীবিকা নির্বাহের বিভিন্ন পথ বেছে নিতে হয় মানুষকে। নিজ ও পরিবারের প্রয়োজন পূরণে অর্থ উপার্জন, ব্যয় এবং শরিয়তসম্মত উপায়ে অর্থসঞ্চয়ে বেশ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম।

হজরত মিকদাদ (রা.)-এর সূত্রে বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এর চেয়ে উত্তম খাদ্য আর নেই, যা মানুষ স্বহস্তে উপার্জনের মাধ্যমে খেয়ে থাকে। নবী দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।’-সহিহ বোখারি: ২০৭০

সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি বিদায় হজের বছর একটি কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) আমার খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য আসেন। তখন আমি আরজ করলাম, আমার রোগ চরমে পৌঁছেছে আর আমি সম্পদশালী। একমাত্র কন্যা ছাড়া আমার কোনো উত্তরাধিকারী নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদকা করতে পারি? নবী কারিম (রা.) বললেন, না। আমি আবার বললাম, তাহলে অর্ধেক। তিনি বললেন, না। অতঃপর তিনি বলেন, এক-তৃতীয়াংশ; এক-তৃতীয়াংশও অনেক পরিমাণ অথবা অধিক। তোমরা উত্তরাধিকারীদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদের খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তুমি যেকোনো ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময় প্রদান করা হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দেবে …।’-সহিহ বোখারি: ১২৯৫

উপরের বর্ণনা থেকে অর্থোপার্জন, ব্যয় ও সঞ্চয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বুঝে আসে। তবে অর্থসঞ্চয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপন্থা ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। কেউ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে অর্থসঞ্চয় করে বিনিয়োগ করে। এতে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ও কর্মসংস্থানের নতুন পথ উন্মোচিত হয়। ফলে ব্যাপক জনগোষ্ঠী অর্থনীতির সুফল ভোগ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আপনার পালনকর্তার রহমত বণ্টন করে? আমি পার্থিব জীবনে তাদের জীবিকা তাদের মধ্যে বণ্টন করেছি এবং মর্যাদায় একজনকে আরেকজনের ওপর উন্নত করেছি, যাতে তারা একে অন্যের দ্বারা কাজ নিতে পারে। তারা যা সঞ্চয় করে, আপনার পালনকর্তার রহমত তদপেক্ষা উত্তম।’-সুরা জুখরুফ: ৩২

তবে এ ক্ষেত্রে ইসলাম নির্দেশিত খাত নির্বাচন করতে হবে। যে বিনিয়োগে সুদ ও হারাম মিশ্রণের আশঙ্কা আছে, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা সুদ ভক্ষণ করে, কিয়ামতের দিন তারা ওই ব্যক্তির ন্যায় দাঁড়াবে, যাকে শয়তান আসর (স্পর্শ) করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যেÑ তারা বলে, ক্রয়-বিক্রয় সুদের মতো। অথচ আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয় হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম। অতঃপর যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসার পর সে বিরত হয়, আগে যা হয়ে গেছে তা তার। আর তার (অভ্যন্তরীণ) ব্যাপারটি আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা আবার সুদের দিকে ধাবিত হয়, তারা জাহান্নামের অধিবাসী। চিরকাল তারা সেখানে অবস্থান করবে।’-সুরা বাকারা: ২৭৫

তা ছাড়া জনকল্যাণ ও মানবসেবার বাসনা, ঘনিষ্ঠজন ও পরবর্তী প্রজন্মের চিন্তা এবং ভবিষ্যতের ভাবনায় অর্থ-সম্পদ সঞ্চয় করে থাকে অনেকে। নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে এটির বৈধতা ও স্বীকৃতি দিয়েছে ইসলাম। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যেই সম্পদ সঞ্চয় করা হোক না কেন; সঞ্চিত সম্পদ ‘নেসাব’ পরিমাণ হয়ে পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে, তাতে জাকাতের বিধান নিশ্চিত করতে হবে। মানবসেবা ও কল্যাণমূলক কাজে লৌকিকতা পরিহার করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করতে হবে এবং নিজের ও পরবর্তীদের জন্য অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে সঞ্চয় থেকে বিরত থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করো না এবং বিচারকের কাছে সে সম্পর্কে এই উদ্দেশে মামলা রুজু করো না যে, মানুষের সম্পদ থেকে কোনো অংশ জেনে-শুনে পাপের পথে গ্রাস করবে।’-সুরা বাকারা: ১৮৮

হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত এক হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও এক বিঘত পরিমাণ সম্পদ ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন সাত স্তর জমিন তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।’-সহিহ বোখারি: ২৪৫৩

সম্প্রতি বাংলাদেশে সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়েছে। যা যুগান্তকারী পদক্ষেপ এবং প্রশংসনীয় একটি উদ্যোগ। এটি শেষ বয়সে মানুষের আর্থিক চাহিদা কিছুটা হলেও পূরণ করবে এবং তাদের চিন্তা ও পেরেশানিমুক্ত রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে আশা করা যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশে শরিয়তসম্মত পেনশন ব্যবস্থা চালু আছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে এখানেও শরিয়তসম্মত পন্থা অবলম্বনই বাঞ্ছনীয়। যেহেতু প্রচলিত পেনশন ব্যবস্থায় কোনো শ্রমের বিনিময় নেই; সরাসরি টাকার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকার আদান-প্রদান, সেহেতু এখানে সুদ ও গরারসহ (গরার এমন লেনদেন, শরিয়ত বর্ণিত পন্থায় যার পরিণতি অজ্ঞাত) কিছু শরিয়ত নিষিদ্ধ উপাদান রয়েছে; ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে যা অসমর্থিত। বাহ্যিক লাভ ও সম্ভাবনার আশা থাকলেও ভবিষ্যতে এটি দেশ ও জাতির সামগ্রিক অকল্যাণ ও দুর্ভোগের কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে দেশের ইসলামি অর্থনীতিবিদ, বিজ্ঞ আলেম ও গবেষকের সহায়তা ও পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।

শেষ জীবনে মানুষ বিশেষত মুসলমানরা অন্যায়-অপরাধ ও গোনাহমুক্ত জীবন কাটাতে চায়। অতীত অপরাধ থেকে তওবা করে পাপ-পঙ্কিলমুক্ত জীবন নিয়ে পরকালের পথ ধরতে চায়। সুদ ও অন্যান্য হারাম সংমিশ্রণের আশঙ্কায় অনেকে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণে অনাগ্রহী হচ্ছেন। শরিয়তসম্মত পেনশনব্যবস্থা তাদের জীবন সায়াহ্নে সাহায্যকারী ও আত্মিক প্রশান্তির কারণ হবে আশা করি। অতএব, উপার্জনে বৈধ পথ খুঁজতে হবে, ব্যয়ে অপচয় রোধ করে মিতব্যয়ী হতে হবে এবং সঞ্চয়ে কৃপণতা ও অবৈধ পথ পরিহার করে শরিয়তসম্মত উপায় গ্রহণ করতে হবে।

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION